ছাত্রদের গনঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর দেশে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দেশ গঠনে অর্থনৈতিক কাঠামো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সামাজিক সুবিচার, কুটনৈতিক ব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারেরকাজগুলো। দেশের এমন ক্লান্তিলগ্ন পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বন্যায় বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত করেছে দেশকে।
এর মধ্যে চলতি বছরে গেল কয়েক মাসের ব্যবধানে দফায় দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলেছে উখিয়ার নিম্নাঞ্চল গ্রামের মানুষগুলোদের। তাদের ঘর বাড়ি খামার,মাছের ঘেরসহ ঘরে গৃহপালিত পশুপাখি থেকে শুরু করে বিভিন্ন দিক দিয়ে আর্থিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে।
গেল ১২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে কক্সবাজারের উখিয়ায় বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে টানা ২ দিন ভারী বর্ষণে পাহাড়ী ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে ৩য় দফায় অন্তত অর্ধশত গ্রাম পানিতে তলিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয় ।
এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ছোট বড় প্রায় ৫০ টিরও বেশি গ্রামের ৪০/৪৫ হাজার মানুষ। বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে, গ্রামীণ সড়ক লণ্ডভণ্ড কালভার্ট বিধ্বস্ত গাছপালা এবং পানের বরজ নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন হয়েছে। সংকটে পড়েছে বিশুদ্ধ পানির, শুকনা খাবারসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের । বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহও। এসব বন্যার্ত মানুষের জীবন যাত্রার মান একেবারেই বিপর্যস্ত।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, জালিয়া পালং ইউনিয়নের নম্বরী পাড়া, ঘাটঘর পাড়া পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া ডেইপাড়া মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, মনির মার্কেট, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজির কুল, রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃ কাটা,পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকার পাডা, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিল সহ অন্তত ৫০ টি গ্রামে পানি তলিয়ে গেছে। চারদিকে পানি আর পানি। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক গবাদি পশু মারা যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে মাঠে কিছু সংখ্যাক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবক দল সিপিপি’র সদস্যগনদের মাঠে দেখা গেছে।
স্থানীয় মৎস্য চাষীরা বলছে, চলতি বছরে তাদের উপর বেশ কয়েকবার এমন দুর্যোগ নেমে এসেছে। মাছ চাষের ব্যবসা করে নিয়মিত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । বন্যার পানি মৎস্য ঘের ও পুকুরে ডুকে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে চলে গেছে।
হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, রুমখা চৌধুরী পাড়া, বউ বাজার, পাগলির বিল, বড়বিল, মনি মার্কেট সহ বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। সবজি ক্ষেত সহ আমন মৌসুমের ধানের চাষাবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে।
উখিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাউসার জানিয়েছেন, বন্যা কবলিত হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড, জালিয়াপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড, রত্নাপালং, রাজাপালং ২নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। তাদের শুকনা খাবার, খিচুড়ি প্রাথমিকভাবে দেওয়া হইছে। বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এরকম তালিকা তৈরি করতে মেম্বার-চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়ছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেন বলেছেন, বন্যাকবলিতদের নিয়মিত খোজ খবর রাখা হচ্ছে। তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন এনজিও ইতিমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। গত রাতেও অনেক জায়গায় খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে। আজ পর্যন্ত ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এসেছে। ডিসি মহোদয় আজকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখার কথা রয়েছে উনি হয়তো আরো বড় বরাদ্দ আনতে সহায়তা করবেন। যাদের ঘরবাড়ি ভেংগে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করে আমরা উপরমহলে পাঠাব।
আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ভারি বৃষ্টিতে উখিয়াসহ কক্সবাজারের অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।