শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন ২০২৫-এর ফলাফল ঘোষণা সভাপতি জসিম, সম্পাদক তানভীর উখিয়ার ঘাটে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর তাণ্ডব: পারিবারিক বিরোধের জেরে রক্তাক্ত সংঘর্ষ যেকোনো সময় সচল করা হতে পারে আ.লীগের কার্যক্রম: ড. ইউনূস মাদক ছিনতাই থেকে পাচার—সবখানেই সক্রিয় পালংখালীর মঞ্জুর আলম তাঁতীলীগ নেতাকে ছেড়ে দিয়ে সংবাদকর্মীকে গ্রেফতার করলেন উখিয়ার ওসি! কক্সবাজারে শিক্ষিকা ধর্ষণ মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস অভিযোগ, বর্জন, বিক্ষোভের ভোট, ফলের অপেক্ষা কুতুপালং বাজার ব্যবসায়ী সমিতি নির্বাচন ঘিরে আলোচনায় মোহাম্মদ ইমরান উচ্ছেদ কার্যক্রমে বাধা: ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা

টানা বর্ষণে পানিতে ভাসছে উখিয়া

আলাউদ্দিন, উখিয়া: / ১০৬ বার
আপডেট সময় : বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪

মাত্র দুই দিনের ভারী বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর উখিয়া উপজেলা। সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও গেল দুই দিনের টানা বর্ষণে থইথই করছে চারিদিক। কোথাও হাঁটু পরিমাণ, কোথাও গলা পরিমাণ পানি। জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।

 

গত সোমবার দিবাগত রাত, মঙ্গলবার ও বুধবারে বর্ষিত ভারী বর্ষণে এক মাসের ব্যবধানে ফের প্লাবিত হলো  উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়েছে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ৪০ হাজার বাসিন্দা।

 

বানের পানি ঢুকেছে নিচু ও উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বাড়িঘর, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। পানি ঢুকেছে নিচু এলাকার বিভিন্ন স্টেশনে, দোকানপাটে। সাগর-নদী-নালা-খাল-বিলের বাঁধ ভেঙে ও পাহাড় বেয়ে আসা পানি ঢুকে পড়েছে ঢলে ঢলে।

 

পালংখালী ইউনিয়নের ধামনখালী, রহমতেরবিল ও আঞ্জুমানপাড়া এলাকায় চিংড়ি, কাঁকড়া ও মৎস্যঘের পানির নিচে তলিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এতে লোকসান হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ঢলের ধাক্কায় ভেঙে গেছে অসংখ্য মাটির ঘর, কালভার্ট, ব্রিজ, কাঁচা রাস্তা। এ ছাড়াও ব্যাপক হারে ভেঙে গেছে গাছপালা, পানের বরজসহ অসংখ্য ঠুনকো স্থাপনা। প্রাণহানি ও অসুস্থতার মুখে পড়েছে বিভিন্ন গবাদিপশু: গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস, মুরগি ইত্যাদি।

 

এ ছাড়া ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রান্তিক খামারি ও কৃষকরা। খেতে পানি ঢুকে বিনষ্ট হয়েছে ফসল; নষ্ট হয়েছে কৃষিজমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন পশুপাখির ফার্ম করা গ্রামীণ উদ্যোক্তারা।

 

বন্যাপরিস্থিতির কারণে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে সাধারণ মানুষের। ঘরবন্দি দিনমজুর, কর্মজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা৷ এমনকি ঘরবন্দি ভিক্ষুকশ্রেণিও। বাজার-সদাই করতেও বের হতে পারেননি কেউ কেউ।

 

দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে জনপদের বিভিন্ন সড়ক। এমনকি কোথাও কোথাও ডুবে গেছে প্রধানসড়ক (কক্সবাজার-টেকনাফ)। বিশেষ করে ডুবে যায় থাইংখালী কবরস্থানসংলগ্ন ও বালুখালী ব্রিজসংলগ্ন প্রধানসড়ক এলাকা। গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলো ছিঁড়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় প্রধানসড়কের সঙ্গে। ফলে যানবাহন চলাচলে দেখা দেয় প্রতিবন্ধকতা। সড়ক ডুবে যাওয়ায় হাঁটাচলাতেও ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ।

 

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, তার এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ৫০টির বেশি বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া তার এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ তিন থেকে চারটি সড়ক ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এখনো উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

 

হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, তার ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। গত রাত (মঙ্গলবার) থেকে ১০ হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিভিন্ন গ্রামে পানিবন্দি রয়েছে মানুষ। ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীরা।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, পানবন্দি পরিবারগুলোর খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের দেখভালের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

তিনি জানান, চলমান ভারী বর্ষণে উখিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে, পাহাড় ধস হচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে ও নিম্নাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতার জন্য পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

 

উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পন্ডিতপাড়া, হাকিমপাড়া, তাজিনমারখোলা, গৌজঘোনা, ধামনখালী, রহমতেরবিল, নলবনিয়া, আঞ্জুমানপাড়া, গয়ালমারা, বালুখালী; জালিয়াপালং ইউনিয়নের নম্বরিপাড়া, ঘাটঘরপাড়া, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, মনখালী; হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, রুমখাপালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বউবাজার, কুলাল পাড়া, মনির মার্কেট, পাগলির বিল;  রাজাপালং ইউনিয়নের সদর এলাকা, কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া, তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজির কুল, হাজিরপাড়া, মালভিটাপাড়া, ডিগলিয়াপালং, সিকদারবিল, বটতলি; রত্নাপালং ইউনিয়নের সাদকাটা, পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকারপাডা, গয়ালমারাসহ অন্তত ৫০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।

 

পরিবেশবাদীদের মতে: খাল ভরাট, কৃষিজমি ভরাট ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের কারণে বর্ষাকালে বন্যাপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

 

ভারী বর্ষণের প্রথম দিন মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৮ ব্লকে পানিতে ডুবে গিয়ে মো. রায়হান নামে সাত বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। শিশুটি ওই ক্যাম্পের মো. মোজাম্মেলের ছেলে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর