এম ফেরদৌস ( উখিয়া কক্সবাজার)::
উখিয়া উপজেলার আনাচে-কানাছে বাড়ছে অনলাইন জুয়াই আসক্তি। এতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষ জড়াচ্ছে এসব অনলাইন জুয়াই। এতে খোয়া যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।
এসব অনলাইন জুয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় , ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশ এজেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে উখিয়ার অধিকাংশ ব্যবসায়ী এবং সাধারণ পাবলিক বিদেশের এসব জুয়ার সাইটের এজেন্ট খুলে বসেছেন ।
এসব এজেন্ডের দারা টাকা উত্তোলন ও ডিপোজিট করে জুয়ার একাউন্টে টাকার লেনদেন করেন। এ জুয়ায় আর্থিক লেনদেনের আরো সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয়- রাশিয়া থেকে পরিচালিত জুয়ার সাইট বেটউইনার (betwinner ও 1xbet) সহ একাধিক সাইটে বাংলাদেশিদের লেনদেনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় যুক্ত। এছাড়া রয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমেও পেমেন্ট করার সুযোগ।
বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, শুধু উখিয়া ছাড়াও দেশজুড়ে ব্যাপক হারে বেড়ে চলছে অনলাইন জুয়ার ফাঁদ। অনলাইনে লোভনীয় বিজ্ঞাপনে এসব জুয়ার সাইটের ফাঁদে পা দিচ্ছেন নানা বয়স ও পেশার মানুষরা, যার অধিকাংশই তরুণ। রেফার কোড ও প্রমু কোডের মাধ্যমে এসব জুয়ার ব্যাপ্তি বাড়ছে গাণিতিক হারে। পকেটমানির সঙ্গে কিছু বাড়তি টাকা যোগ করার আশায় অনলাইন জুয়ার কালো ছায়ায় জড়িয়ে পড়ছেন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ও বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ বলেন, ‘আমাদের উখিয়ায় অনলাইন জুয়ার প্রভাব বিস্তর হারে বাড়ছে। আমি শুরু করি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে। বলল 1xbit নামের একটা অ্যাপ আছে সেখানে অল্প টাকা ইনভেস্ট করলে অনেক টাকা আসে এতে কোন শ্রম দিতে হয় না।’ সে প্রথমে বিশ্বাস না করলেও তার ওই বন্ধুকে জুয়ায় টাকা আয় করতে দেখে সেও আগ্রহী হয়ে টাকা লাগান।এতে কয়েকদিন লাভমান হয়ছিলাম, লোভে পড়ে পুনরায় বাড়তি লাগাতে গিয়ে যা লাভ ছিল তার থেকে বেশি চলে গেছে।
সে আরো জানায়, এসব জুয়ার টাকা লেনদেন করতে উখিয়াতে অনেক এজেন্ট রয়েছে। যা আমি টাকা ডিপোজিট ও উত্তোলন করি কোন ভেজাল ছাড়াই।
এক প্রশ্নে, এজেন্ট কারা জানতে চাইলে সে বলে, আমি তাদের নাম বলতে পারব না। নাম বলে দিলে তারা আমাকে আর টাকা লেনদেন করার সুযোগ দিবে না।
এসব জুয়ায় জড়িত আরেক ব্যাক্তির কাছ থেকে কৌশলে জানতে পারি, এসব জুয়ার এজেন্ডের মধ্যে কোটবাজার,কামরিয়া বিল, রুহুল্লারডেবা,উখিয়া সদর, ডিগলিয়া,কুতুপালং, মনিমার্কেটসহ বেশ কিছু এলাকার তরুণরা রয়েছে। কিন্তু তারা এমন কৌশলে চলাপেরা করে তাদের চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে এজেন্ট যারা রয়েছে তারা বেশি লাভমান হয়। তারা লাখ লাখ টাকার লেনদেন করেন। এক প্রশ্নে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায়, তাদের পরিচয় দেওয়া যাবে না তারা আমাদের ডিলার।
এসব জুয়ার নেশা থেকে ফিরে আসা এক ব্যাক্তি জানায়, অনলাইন জুয়ার আদতে অনেকেই ফেঁসে যাচ্ছেন বড় প্রতারণায়। জুয়ায় বড় অংকের টাকা লাগাতে আগ্রহী করতে প্রথম দিকে কিছু টাকা জিতিয়ে তৈরি করা হয় লোভের ফাঁদ। পরে সর্বহারা হয়ে মাথায় হাত দিয়ে পথে বসতে হয়। আমি নিজেই এসবে ভুক্তভোগী। তাই আমি এসব কালোজগত ছেড়ে চলে এসেছে। আমি চাই এসব থেকে তরুণরা ফিরে আসুক। আমি এজেন্টের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের খুব শীগ্রই দিব।
সুশীলদের মন্তব্য জুয়ার এ কালো ছায়ায় আর্থিকভাবে তরুণরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, এর বেশিরভাগ সামাজিক অবস্থান। এছাড়া এর আইনগত দিক তো রয়েছেই, কেননা দেশের প্রচলিত আইনে জুয়া স্বীকৃত নয়। তা সত্ত্বেও ফেসবুকসহ নানা সামজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনলাইন জুয়ার বহু ফাঁদ। ফেসবুক আইডি, পেজ, গ্রুপ, ওয়েবসাইট ও মোবাইলভিত্তিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপস দিয়ে চলছে জুয়ার অনলাইন আসরগুলো। প্রথমে নিতান্ত কৌতূহল থেকে আকৃষ্ট হচ্ছে তরুণরা। শুরুতে পাঁচ-দশ হাজার টাকার বিনিয়োগে শুরু করে লোভে পড়ে শেষমেশ হারাচ্ছেন বড় অংকের টাকা। এসব টাকার সিংহভাগই চলে যাচ্ছে বিদেশে, ফলে জাতীয় অর্থনীতিতেও কোনো না কোনোভাবে নৈতিবাচক প্রভাব ফেলছে এটি।
জানা যায়, এসব জুয়ার সাইট অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশের এজেন্টরা। জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে।