রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
উখিয়ার ঘাটে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর তাণ্ডব: পারিবারিক বিরোধের জেরে রক্তাক্ত সংঘর্ষ যেকোনো সময় সচল করা হতে পারে আ.লীগের কার্যক্রম: ড. ইউনূস মাদক ছিনতাই থেকে পাচার—সবখানেই সক্রিয় পালংখালীর মঞ্জুর আলম তাঁতীলীগ নেতাকে ছেড়ে দিয়ে সংবাদকর্মীকে গ্রেফতার করলেন উখিয়ার ওসি! কক্সবাজারে শিক্ষিকা ধর্ষণ মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস অভিযোগ, বর্জন, বিক্ষোভের ভোট, ফলের অপেক্ষা কুতুপালং বাজার ব্যবসায়ী সমিতি নির্বাচন ঘিরে আলোচনায় মোহাম্মদ ইমরান উচ্ছেদ কার্যক্রমে বাধা: ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা পদত্যাগ করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী

কথায় কথায় হ্যান্ডকাফ লাগান পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন

এম ফেরদৌস / ২৯৮ বার
আপডেট সময় : সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

★ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জবরদখল করে নেন ১০ একর জমি

★ বাদ দেয়নি প্রবাসী ও পা’ পাহারা পঙ্গুর শেষ সম্বলও

★ চাষাবাদ ও বিভিন্ন প্রজেক্ট করে তুলছে ভাড়া

★ প্রতিবাদ করলেই মাদক দিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি

★ কথায় কথায় হ্যান্ডকাফ লাগান এই কর্মকর্তা

★ ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ

এম ফেরদৌস :: ( উখিয়া কক্সবাজার)

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ক্যাম্পভিত্তিক এলাকায় আইনি নোটিশ বা ভুমি অধিগ্রহণের নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে অন্যের মালিকানাধীন জমি জোরপূর্বকভাবে জবর দখল নিয়ে রোহিঙ্গাদের ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে ১৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বরত ৮-এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা। এমন অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ভুক্তভোগী জায়গার মালিকরা।

 

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ১৩ এবং ১৯নং ক্যাম্প ভিত্তিক এলাকায় খতিয়ানী ও সামাজিক বনায়ণের ব্যাক্তি মালিকানাধীন প্রায় ১০ একরের বেশি জমি জবর দখল করে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে চাষাবাদ, মাছের প্রজেক্ট, বিভিন্ন খেত খামার করাচ্ছে ১৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিন ও তাঁর নিয়ন্ত্রিত পুলিশ সদস্যরা। এসবের বিনিময়ে তিনি নিচ্ছেন মাসিক বা বাৎসরিক মোটা অংকের জমি লাগীয়ত ভাড়া।

এমন তথ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, তাদের দাবিকৃত জায়গায় ১৩নং ক্যাম্পের জাফর আলম নামে এক রোহিঙ্গা জমিতে চাষাবাদ করার জন্য কাজ করতেছিল।

তার কাছে জমি কার জানতে চাইলে, রোহিঙ্গা জাফর বলে জমিটি আমি লাগীয়ত নিছি এপিবিএন পুলিশ থেকে। মালিক কে আমি জানি না। এপিবিএন পুলিশে জমিটি আমাকে ১সিজনের জন্য লাগাইছে। আমি টাকা দিয়ে নিছি। আমি তো অল্প করে নিয়েছি। আমার আশে পাশে সব জায়গা তো পুলিশে লাগাইছে। কোন মালিক তো আসে নাই।

 

জমির প্রকৃত মালিক হাজী নুরুল ইসলাম জানান, আমি দীর্ঘ কয়েক বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসে শেষ সম্বল জমিটুকু চাষাবাদ করে কোনমতে পরিবারকে নিয়ে বাকি জীবন পার করছিলাম।  জমিতে চাষাবাদ ও অন্যন্য খেত খামার করে খুব সুন্দরমতই চলছিল আমার পরিবার।

কিন্তু দুঃখের বিষয় রোহিঙ্গা আসার পরে হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই ৮এপিবিএন পুলিশ আমার খতিয়ানী দালিলীক ৫০ শতক জমিটুকু কোন নোটিশ ছাড়া জবর দখল করে নেন। কিছু অংশ তাদের অফিস কোয়ার্টার বানিয়েছে। বাদ বাকি জমি রোহিঙ্গাদের ভাড়া দিয়ে তারা নিজেরাই ভাড়া নিচ্ছে।

এই ভুক্তভোগী আরো জানান, আমার জায়গাটি তারা কি মূলে দখল করেছে জানতে এপিবিএন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিনের সাথে কথা বলছিলাম তিনি আমাকে সাফ জবাব দিয়ে বলেছেন এগুলা সিআইসি’র ওখানে গিয়ে কথা বলতে।

সেখানে গিয়েও সন্তোষজনক সুরহা না পেয়ে ৮এপিবিএন পুলিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছি। তারা শুধু আমার জায়গা নই স্থানীয় অনেক মানুষের জায়গা জবরদখল করে রেখেছেন। বাদ দেয়নি পা’ হারা এক পঙ্গুর জমিও।

 

দুই পা’ হারা পঙ্গু বোরহার উদ্দিন আকুতি জানিয়ে বলেন, আমার বাবা-দাদার শত বছরের ভোগ দখলীয় এই জমিটিতে খেত খামার করে আয় রোজকার করতো। এখন আমি পঙ্গু হয়ে এই জমিটি লাগীয়ত দিয়ে চলতাম। এখন আমার এই শেষ সম্বল্টুকুও এপিবিএন এসে দখল করতে চাচ্ছে। এই জমিটার পাশে একটা ছোট মাছের ঘের ছিল আমার। সেখান থেকেও এপিবিএন পুলিশ এসে অনেক টাকার মাছ নিয়ে গেছে। আমরা তাদের নির্যাতন ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। আপনারা আমাদের এই অসহায়ত্বের পাশে দাড়াঁন।

 

সরেজমিন পরিদর্শনে প্রতিবেদককে একাধিক ভুক্তভোগী আকুতি মিনতি করে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে জমি জবরদখল ও অন্যায়ভাবে স্থানীয়দের হয়রানি করে গেছে ১৯নং ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা। তারা কথায় কথায় হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে কিছু করতে না পারলে অবৈধ জিনিস দিয়ে মামলা করে দেওয়ার হুমকি।

এসবেও ব্যার্থ হলে স্থানীয়দের কৃষি জমি ও খেত খামারের জমি সরকারের প্রয়োজন দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য খেলার মাঠ করিয়ে দেয় বিনা কারণে। তারা প্রতিশোধ নেয় আমাদের জায়গা কেড়ে নিয়ে। রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়ে অনেক উদারতা দেখিয়েছি আমরা।

 অথচ আমাদের জমিগুলো তারা দখল করে রোহিঙ্গাদের জন্য সুযোগ সুবিধা করে দিচ্ছে কোন উপরমহলের নির্দেশ ছাড়াই। আমাদের এসব ভোগ দখলীয় জমিগুলো সরকারের প্রয়োজন হলে ডিসি,সিআইসি,ম্যাজিস্ট্রেট এরা আসবে বা আমাদের আইনি নোটিশ দিবে। কিন্তু কোন সময় এসব উপরের কর্মকর্তারা আসে নাই। সবসময় এই পুলিশগুলোই আমাদের জমি জবরদখল করতে আসেন।

 

আমরা এখন ডিসি সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আকারে অভিযোগ দায়ের করেছি। এসবের সুস্থ সামাধান না হলে আমরা স্থানীয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে উচ্চ আদালতে আইনি সহায়তা চাইব।

 

এসব ঘটনার বিষয়ে জানতে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ গফুর উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জোরপূর্বক জমি জবরদখল করার ঘটনা সত্য। ৮এপিবিএন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন কাদের ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় দিয়ে অনেক মানুষকে হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি অনেকবার আমার কানে আসছে । কোন কারণ ছাড়া জমি দখল করেছে এরকম অনেক মানুষ আমার কাছেও আসছিল আমি নিরুপায়। কাউকে কোন সুরহা দিতে পারেনি। তবে তারা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে কপি আছে হাতে।

 

অভিযুক্ত ৮এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিন এসব ঘটনা অস্বীকার করে প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। জমি জবরদখল করি নাই। তবে কোয়ার্টার করতে যে পরিমান জায়গা নিয়েছি সেটার জন্য হাইকোর্টে মামলা করেছে। সেটার রায় তাদের পক্ষে আসলে তারা ফেরত পাবে। এইখানে আমার কিছুই নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর