সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
উখিয়ার ঘাটে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর তাণ্ডব: পারিবারিক বিরোধের জেরে রক্তাক্ত সংঘর্ষ যেকোনো সময় সচল করা হতে পারে আ.লীগের কার্যক্রম: ড. ইউনূস মাদক ছিনতাই থেকে পাচার—সবখানেই সক্রিয় পালংখালীর মঞ্জুর আলম তাঁতীলীগ নেতাকে ছেড়ে দিয়ে সংবাদকর্মীকে গ্রেফতার করলেন উখিয়ার ওসি! কক্সবাজারে শিক্ষিকা ধর্ষণ মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস অভিযোগ, বর্জন, বিক্ষোভের ভোট, ফলের অপেক্ষা কুতুপালং বাজার ব্যবসায়ী সমিতি নির্বাচন ঘিরে আলোচনায় মোহাম্মদ ইমরান উচ্ছেদ কার্যক্রমে বাধা: ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা পদত্যাগ করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী

উখিয়ার সীমান্ত ঘিরে ‘ইয়াবা বংশীবাদক’ বক্করের ভয়ঙ্কর পাপের সাম্রাজ্য

ডেস্ক রিপোর্ট / ২৩০ বার
আপডেট সময় : শনিবার, ৩ মে, ২০২৫

একসময় যিনি ছিলেন শুধু একজন জিলাপি বিক্রেতা, সেই আবু বক্করের নাম এখন কক্সবাজারের সীমান্তজুড়ে আতঙ্কের প্রতীক। স্থানীয়দের কাছে যিনি পরিচিত ছিলেন ‘বক্কর বাড়ুয়া’ নামে, সেই মানুষটি আজ পরিচিত ‘ইয়াবা বক্কর’ নামে- উখিয়া-ঘুমধুম সীমান্তের ভয়ংকর মাদক সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের বেতবুনিয়া গ্রামের মৃত হোছেন আহমদের ছেলে বক্করের উত্থান যেন অপরাধ জগতের রূপকথা। সীমান্ত-ঘেঁষা অবস্থানকে পুঁজি করে প্রথমে চোরাচালান, পরে ইয়াবা পাচারে জড়ান তিনি। ক্রমে গড়ে তোলেন ১৫–১৬ জনের একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট, যা আজও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সক্রিয়ভাবে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানান, বক্করের অপরাধজগত এখন কেবল ইয়াবা পাচারে সীমাবদ্ধ নেই। অস্ত্র সরবরাহ, চোরাচালান এমনকি আরাকান আর্মির মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে রসদ পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অস্ত্রধারী লোকজন নিয়ে সীমান্তে ‘পাহারা’ বসান তিনি নিজেই- যেন পুরো সীমান্ত এখন রাষ্ট্রের নয়, বক্করের নিয়ন্ত্রণে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা ও স্থানীয় প্রশাসনের নীরবতায় তিনি হয়ে উঠেছেন এক ‘অঘোষিত শাসক’।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট সন্ধ্যায় উখিয়ার মরিচ্যা চেকপোস্টে ৭ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবাসহ বক্কর ও তার চার সহযোগীকে আটক করে বিজিবি। মামলা হয়, বক্কর যান জেলে। কিন্তু মাত্র দুই মাসের মাথায় জামিনে বেরিয়ে এসে পুরোনো চেহারায় ফিরে যান তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বক্করের অনুপস্থিতিতেও তার সিন্ডিকেট নির্বিঘ্নে চালিয়ে গেছে মাদকের ব্যবসা।

এলাকাবাসী জানান, বক্করের একাধিক বিশ্বস্ত সহযোগী রয়েছে যারা তার নির্দেশে কাজ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, “প্রতিমাসেই ঢাকায় পৌঁছে যায় তার ইয়াবার চালান। দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে সেই মাদক। কেউ মুখ খুললে তার পরিণতি ভয়াবহ।”

বক্করের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান স্থানীয়রা। কারণ, ভয়ভীতি, হুমকি আর প্রকাশ্য হামলা তার নিয়মিত কৌশল। শিক্ষক থেকে ব্যবসায়ী- সবাই বলছেন, এলাকার বহু তরুণ বক্করের সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ছে দ্রুত আয়ের মোহে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও স্থায়ী সমাধান নেই। বরং জামিনে বেরিয়ে এসে আরও ভয়ংকর রূপে ফিরে আসেন বক্কর।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্ত দিয়ে আসা ইয়াবা প্রথমে পাহাড়ি গুদাম বা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জমা হয়। সেখান থেকে তা নিরাপদ পথে ছড়িয়ে পড়ে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও এমনকি ভারত পর্যন্ত। এই নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন বক্কর নিজেই।

বক্করের অবৈধ টাকার গরমে তার আচরণও হয়ে উঠেছে বেপরোয়া ও হিংস্র। সম্প্রতি নিজের অপরাধ নিয়ে প্রশ্ন করায় এক স্থানীয় সাংবাদিকের ওপর প্রকাশ্যে অতর্কিত হামলা চালান তিনি। এরপর বক্করের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সম্পর্কে তিনি অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা প্রশ্ন শুনে ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানান, যা প্রকাশে অনুপযুক্ত ও ন্যক্কারজনক।

বক্করের মতো একজন অপরাধী দিনের পর দিন সীমান্তজুড়ে রাজত্ব কায়েম করে বসে থাকলেও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ। ফলে এলাকায় গড়ে উঠেছে ভয়ের সংস্কৃতি, মাদকের নেটওয়ার্ক, এবং এক ভয়ংকর সামাজিক বিপর্যয়। স্থানীয়দের মতে, যতদিন বক্করের মতো অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসবে, ততদিন সীমান্তজুড়ে এই অপরাধচক্র থামানো কঠিন হবে।

অবৈধ টাকার দাপটে বক্কর এখন এক বেপরোয়া ও হিংস্র চরিত্রে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি তিনি নিজের অপকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ক্ষিপ্ত হয়ে এক স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর ওপর প্রকাশ্যে অতর্কিত হামলা চালান। এলাকাবাসীর মতে, কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই সেই একই পরিণতির শিকার হচ্ছে- ভয়ভীতি, হুমকি, কিংবা সরাসরি শারীরিক হামলা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরবতা যেন তার এই বেপরোয়া আচরণে আরও সাহস জুগিয়ে চলেছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আবু বক্করের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদকের বক্তব্য নিশ্চিত হওয়ার পর কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।###


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর