উখিয়ার কুতুপালং বাজারে এক রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণের কায়দায় আটকে রেখে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি জানে আলমের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা নাগরিক সৈয়দ হোসেন জানান, গত ৫ এপ্রিল রাতে কুতুপালং দোকান মালিক সমিতির অফিসে ডেকে নিয়ে তার ওপর এই বর্বরতা চালানো হয়।
সৈয়দ হোসেন জানান, একটি অপরিচিত নম্বর থেকে এক নারী তার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমেরিকায় যাওয়ার ভিসার বিষয়ে আলোচনা করতে চায়। সরাসরি দেখা করার কথা বলে ওই নারী তাকে কুতুপালং বাজারে ডেকে পাঠায়। সেখানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ৪-৫ জন লোক তাকে জোরপূর্বক দোকান মালিক সমিতির অফিসে নিয়ে যায়। অফিসে নিয়ে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং ভুয়া অভিযোগ তুলে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়।
ওই নারীকে দেখিয়ে বলা হয়, সৈয়দ তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। যদিও সৈয়দ হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং তাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে জানান।
তবে ভয়ভীতি ও শারীরিক হুমকির মুখে তিনি আত্মীয়দের থেকে ধার করে এক বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন বলে জানান।
সৈয়দ হোসেন বলেন, ঘটনার পর আমি কাউকে কিছু বলার সাহস পাইনি। ওরা ভয়ংকর সিন্ডিকেট চালায়। আমাকে হুমকি দিয়েছে মুখ খুললে খুন করে ফেলবে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে ইকবাল নামের এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ঘটনাটি সত্য এবং আমি এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এছাড়াও স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাজার কমিটির সভাপতি জানে আলম দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের নাটক সাজিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে আসছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, নারী কেলেঙ্কারি ও প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, ওই ব্যক্তি ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে কুতুপালং বাজারের নেতৃত্ব দখল করে রেখেছেন। এর আগেও একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, কিন্তু ভুক্তভোগীরা ভয়ে মুখ খুলে না।
যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত জানে আলম বলেন, ঘটনাটি বিচারিক ছিল। এক রোহিঙ্গা নারী টাকা পেতেন, সেই টাকা উদ্ধার করে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ঘটনার বিষয়ে জানতে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের বিষয়টি সত্য। এটি যদি বিচারিক হয়, তাহলে জনসম্মুখে সেটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা দরকার, না হলে মানুষ এটিকে অপকর্মই ভাববে।